পলাশ মন
অন্বেষা ইদানীং পলাশকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে । শুধু তাই নয়, রীতিমতো ওর অস্বাভাবিকতা নিয়ে সংশয়ে আছে কি জানি কেন যে ও এমন আচরণ শুরু করলো,-বোঝা যাচ্ছে না। কারণ নেই, অকারণেই আচমকা বলে বসলো, সত্য নেই জান মা। কোথাও নেই, অথচ সত্য আছে, আমি জানি ও মরে যায়নি, বেঁচে আছে।
কেন এমন কথা ও বলছে, প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর দেয় না পলাশ, নিশ্চুপ হয়ে থাকে!
মায়ের কথায় কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই।
পলাশের এমন আচরণের কথা অন্বেষা দেবাঞ্জনকে বলেছেও। কিন্তু দেবাঞ্জন আমল দেয়নি তেমন। বার কয়েক অন্বেষা বলার পর বলেছে, ও কিছু নয়, কোন্ খেয়ালে কী বলে ফেলেছে,ওই নিয়ে এতো ভাবছো কেন তুমি? একবারই তো বলেছে আর তো বলেনি ?
অন্বেষা বলে তুমি তো আসলে জানো না,এই তো শুভদের বাড়ি যেদিন গিয়েছিলাম, তুমি তখন অফিসে। ওখানে শুভর মা’র সঙ্গে কথা বলছি, শুভর মাও কথায় কথায় শুভর পড়াশোনা নিয়ে খুব বড়াই ক’রে কথা বললো যখন পলাশ বলে বসলো, সত্য নেই, সত্য এখানে থাকতে পারে না ! কী বলবো তোমায়, কী খারাপই যে লাগছিল, লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছিল যখন শুভর মা বললো, পলাশ হঠাৎ এমন কথা বললি কেন? সত্য নামের কেউ কি ক্লাসে পড়ে?
না। সত্য বলে কেউ আমাদের ক্লাসে পড়ে না।
তা হলে হঠাৎ সত্য নেই এখানে বলে উঠলি কেন?
জান দেবাঞ্জন, ও কোন কথা বললোই না।
শুভর মা কি বললো জানো? বললো, ওকে স্বাভাবিক আমার মনে হচ্ছে না দিদি। ওকি এমনটাই করে থাকে?
না না, তা নয়, কোন্ খেয়ালে আজ এমন করে ফেললো বুঝতে পারছি না। এভাবে ম্যানেজ করে সেদিন চলেএসেছি। তুমি ওর ব্যাপারে একটু সিরিয়াস হও দেবাঞ্জন ! আমার ভয় হচ্ছে পরে বাড়াবাড়ি না হয়ে যায়!
তেমন ভাবনার কিছু হয়নি অন্বেষা, বেকার ঐ একটা কথাকে কেন্দ্র ক’রে উৎলা হওয়ার কোনো অর্থ হয় না। আমি বলছি ও কিছু নয়, এতো ভেব না। তবে আর কোনো দিন তেমন কথা বলে কিনা দেখতে হবে, খেয়াল রেখো! কী কারণে বলে সেটাও লক্ষ্য রেখো।তবে আমার মনে হয়, দুশ্চিন্তা করার মতো কিছু হয়নি। আমি ওর ভেতর থেকে আসল কারণটা বের করার চেষ্টা করবো। আমার সামনে এ ধরনের আচরণ না করলে তো বলা যায় না, দেখি কী করা যায়!
দেবাঞ্জন অন্বেষার কথাটা পুরোপুরি উড়িয়েও দিতে পারে না।ছেলেটা আগে তো কখনো এমন অস্বাভাবিক আচরণ করেনি, এখনইবা করছে কেন? যে কোনো একটা কারণ তো থাকবেই? হাজার হোক নিজের সন্তান বলে কথা, ব্যাপারটা নিয়ে একটু উদ্বিগ্ন হয় দেবাঞ্জন।
দেবাঞ্জনের কথায় অন্বেষা খানিকটা হলেও ভরসা পায়। ওকে না বললে তো গুরুত্ব দিত না! দেবাঞ্জনকে বলে ভুল বা অনুচিত কাজ করেনি অন্বেষা।
এক রবিবারের বিকেলের দিকে দেবাঞ্জন চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে উপন্যাসের পাতা ওল্টাচ্ছিল। এমন সময় তার মোবাইলটা বেজে উঠল। দেবাঞ্জনকে ফোনটা ধরতে দেখল পলাশ। বাবার নিকটদূরত্বে বইয়ের পড়া করছিল -ইতিহাস । ফোনটা আসায় পলাশের কৌতুহলী মনটা ওদিকে চলে যায়! আন্দাজ করতে চেষ্টা করে , কে ফোনটা করেছে। বাবার কথাগুলো শোনার চেষ্টা করতে থাকে পলাশ। কথার ধরন বা স্বরে বুঝতে পারে পাশের বাড়ির পিয়ালীদির ফোন। সব কথা না বুজতে পারলেও পলাশ এটুকু বুঝতে পেরেছে, পিয়ালীদির সাথে আগামীকাল দেখা করার কথাই বললো বাবা।
এসময় হঠাৎ অন্বেষা এসে জিজ্ঞেস করে, কে ফোন করেছে?
দেবাঞ্জন একটু অপ্রস্তুতে পড়ে যায়, বলে, ও, অফিসের এক বন্ধুর ফোন, তুমি চিনবে না।
দেবাঞ্জন পকেটে মোবাইলটা রাখতে যাবে এমন সময় পলাশ বলে বসে, সত্য এখানেও নেই, কিন্তু আমি সত্যকে জানি এবং খুব ভালবাসি!
দেবাঞ্জন ঘামতে শুরু করেছে! মুখে কোনো কথা নেই।
পলাশের কথা শুনে থমকে যায় অন্বেষা, যেনবা আচমকাই মূর্তির মতো স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। দেবাঞ্জনের দিকে তার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি-যেন জানতে চাইছে, পলাশের এই অস্বাভাবিকতার যথার্থ উত্তর দেবাঞ্জন কী দিতে পারবে এবার ?