রামলাল
আজ তিনদিন ধরে ফ্ল্যাটের সুইপার আসছে না। এবার বোধহয় নিজেকেই গিয়ে এই জমে যাওয়া ময়লা ফেলে আসতে হবে।সরকারি আবাসনের এই এক অসুবিধে, সুইপার এর সংখ্যা খুব কম।একদিন অন্তর একদিন একজন এসে সব নিয়ে যায় আর সিড়ি ঝাঁঁড় দিয়ে যায়। আমাদের সুইপার রামলাল।লম্ববায় সাড়ে চারফুটের বেশি নয়,রোগা,গায়ের রং বোঝা দায়,এককালে হয়ত ফর্সা ছিল, তবে এখন তামাটে।পরনে থাকে একটা লম্বা ঝোলা প্যান্ট,কোমরে দড়ি বাঁঁধা,ময়লা রং চটে যাওয়া একটা গেঞ্জী। ও সরকারী কর্মচারী নয়,ঠিকা শ্রমিক।কাজ করলে তবে পয়সা পায়।আসে অনেক দূর থেকে।বাড়ি তার রাণাঘাটে।ট্রেন থেকে নেমে আরও বেশ কিছুটা পায়ে হেঁটে ভেতরের দিকে যেতে হয়।বাঁশি বাজাতে বাজাতে ময়লা নিতে আমাদের চার তলায় উঠে হাঁপিয়ে গিয়ে সিঁড়ি তেই বসে পড়ে রামলাল।সেই সামান্য সময়টুকু নানারকম গল্প করে নেয় সে। একদিন প্রশ্ন করলাম, “রামলাল, তুমি বিয়ে করেছ?” সে উত্তর দিল-” ওমা!কি বলেন, বিয়া করুম না,বিয়া তো করতেই লাগে”। আবারও প্রশ্ন করলাম-“তা তোমার ছেলেমেয়ে আছে?” উত্তর এল-” হ,তিনটা,দুই মেয়ে আর একটা পোলা”। বললাম-” তিনটে ছেলেমেয়ে স্ত্রী কে নিয়ে এত বড় সংসার,এত কম টাকায় চালাও কেমন করে?” এবার রামলাল একটু উঠে দাঁড়ায়ি বলল,” ছেলেমেয়ে তো ভগবানের দান,সে তো ফেরান যায় না বলেন? আর সংসারের কথা কইতাছেন,সে চলে না-জোর কইরা চালাইতে হয়।”হাসি পায় ওর এমন কথা শুনে আবার খারাপও লাগে এত কষ্টে মাত্র ওই কটা টাকা সে পায়।
দরজায় কলিং বেল বাজলো,ঐ এল বোধ হয় রামলাল। না,রামলাল নয়, অন্য একটি সুইপার, বাচ্চা ছেলে,কালো রোগা আর বেশ লম্বা।
-” কিরে! তুই,রামলাল এলো না?”
সে উত্তর দিল -” না,এবার থেকে আমিই আসব দিদিমণি।”
“কেন? রামলালের কি হল?”
“তুমি জানো না? গত শুক্রবার রামলাল এখানে কাজ করে বাড়ি যায়,ওর প্রচন্ড গরমে রোদ লেগে রাতে অসুস্থ হয়ে পড়ে।শনিবার সকালে স্ট্রোকে মারা গেল”
ময়লার প্যাকেটটা ছেলেটার হাতে দিয়ে দরজা টা বন্ধ করে দিলাম।